‘অনলাইনে আয়’ কথাটি মনে হয় আমাদের দেহের প্রতিটি রন্ধ্রে রন্ধ্রে পৌছে গেছে। কথাটি শুনলেই আমরা কেমন যেন রোমাঞ্চ অনুভব করি। অনলাইনে আয় করা যায় কথাটি যেমন সত্য অফলাইনেও আয় করা যায় কথাটি তেমন সত্য। অনলাইনে আয়ের অনেকগুলো মাধ্যম রয়েছে। পিপিসি, পিটিসি, পিটিএস, রেফারেল, এ্যাফিলিয়েট, এমএলএম, আউটসোর্সিং ইত্যাদি যা আমরা সকলেই জানি। এ নিয়ে আগেই অনেক জল্পনা-কল্পনা-আলোচনা হয়ে গেছে। কেউ বলেছে অনলাইনে আয় এত সহজ ব্যাপার না-কেউ বা বলেছে আমিতো আয় করেই চলেছি-কেউ বলেছে সাইটটি আইনসিদ্ধ (Legitimate) নয়-কেউবা এর বিপক্ষে পে-আউটের প্রমান নিয়ে হাজির হয়েছেন। আসলে দ্বন্ধ্ব কিন্তু লাগছে নিজেদের ভেতরেই। বিদেশী প্রতিষ্ঠানগুলো আমাদের বোকা বানাচ্ছে। এখন আপনারা হয়তো বলবেন, কি বলছেন আপনি? আউটসোর্সিংয়ের ক্ষেত্রেতো আপনার যুক্তি খাটবে না!……………lolz
এর কারন হচ্ছে অপরিকল্পিত শিক্ষা। বিদেশে মা-বাবারা তাদের সন্তানের ভবিষ্যৎ শিশু বয়সেই ঠিক করে রাখে। শিশুটি কোন বিষযে আগ্রহী তার উপর ভিত্তি করেই তার ভবিষ্যৎ গড়ে ওঠে। আর বাংলাদেশে দেখা যায় বুয়েট থেকে পাশ করার পর ছেলেটি গার্মেন্টস এর ব্যবসা করছে। আমার দু:খ এই জায়গাটাতেই। সে কি তার শিক্ষা কাজে লাগাতে পারলো? না কেন না? কারন বাংলাদেশে ঐ সকল গ্রাজুয়েটদের মূল্যায়ন নেই। কার দোষ? জনগনের, সরকারের নাকি অন্য কোন ব্যাপার? যাক প্যাচাল বাদ। আমি বর্তমানে একটি আমদানি-রপ্তানী সংস্থার সাথে জড়িত। যখন এই পেশায় প্রবেশ করি তখন দেশ-বিদেশের বিভিন্ন বায়ার বা সেলারের সাথে পরিচয় ঘটে।
বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা আমাকে চেনে মি. মেহেদী নামে আর বিদেশী ব্যবসায়ীরা আমাকে চেনে মি. হাসান নামে…..lolz আমদানী-রপ্তানী বা ব্যবসায় মূলত যে ব্যপারটি ঘটে সেটি হচ্ছে বিটুবি। এটিকে আরও ভেঙ্গে বলা যায় বিজনেস টু বিজনেস। এর আরও কয়েকটি ভাগ রয়েছে। যেমন বিজনেস টু কমার্স, বিজনেস টু কনজিউমার, কমার্স টু কমার্স, কমার্স টু কনজিউমান, কনজিউমার টু কনজিউমার ইত্যাদি। আসলে এগুলোর মূল উদ্দেশ্য একটাই, তা হচ্ছে সেলারের সাথে বায়ারের সংযোগ ঘটানো বা উদ্যোকতার সাথে অর্থ বিনিয়োগকারীর সংযোগ ঘটানো। আমরা জানি চাইনিজরা এখন সমস্ত পৃথিবীর প্রায় অর্ধেক ব্যবসা মার্কেট দখন করে রেখেছে। কেন? তাদের জনশক্তি বেশী বলে? তাদের দেশ বড় বলে? তাদের সরকার ভালো বলে? নাকি তাদের অর্থনৈতিক অবস্থা উন্নতি বলে? হ্যা, উপরের সবগুলোতেই তারা স্বয়ংসম্পূর্ণ। তাই বলে এই নয় যে তারা ওগুলোর কারনে এত অগ্রসর।
তাদের উন্নতির মূল কারন হচ্ছে তাদের একতাবদ্ধতা। যেটাকে আমরা ইংরেজীতে বলি Unity. ছোটবেলায় আমরা পড়তাম ‘একতাই বল’। কথাটি খুবই সত্য। আমাদের বাংলাদেশেও দুটি অন্ঞলের মানুষ এই একতাবদ্ধের কারনে উন্নত। আপনারা সিলেট ও নোয়াখালির কথা জানেন। বিস্তারিত বললাম না।
আমার একটা ঘটনা বলি। আমি একবার এক চায়নার গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের সেলসম্যানের সাথে কথা বলছি। একসময সে বলল, তোমরা কি কি আমদানী কর? আমি তাকে আমাদের ওয়েবসাইট দেখার জন্য বললাম। সে দেখে বলল, খুবই ভালো। আমি দেখছি তোমরা কনজিউমার ইলেকট্রনিক্স আমদানী কর। আমার মনে হয় তোমাকে এ ব্যাপারে সাহায্য করতে পারব। আমার এক বন্ধু আছে যে কনজিউমার ইলেকট্রনিক্সের ব্যবসা করে। তুমি বললে, আমি তাকে তোমার কথা বলতে পারি। সেক্ষেত্রে আমার বন্ধু হিসেবে তুমি ভালো ডিসকাউন্ট আশা করতে পারো। আমি তাকে বললাম, সেটাতো খুবই ভালো হয়। সে তাৎক্ষনাৎ তার বন্ধুর সাথে স্কাইপিতে কথা বলল এবং আমাকে তার স্কাইপি আইডি দিল। আমিও তার সাথে কথা বললাম। ব্যাস এখন তার সাথে আমাদের ব্যবসা প্রোসেসিং চলছে। অথচ আমাদের বাঙালিরা এক্ষেত্রে করত কি, হয়ত বলত হ্যা আমি এই ব্যবসা করি (এক্ষেত্রে মিথ্যাচারিতা বেশি থাকে), বা করি না। অথচ খুজলে দেখা যাবে তার কোন আত্মীয় বা বন্ধুই এই ব্যবসার সাথে জড়িত।
এবার একটি কমন কৌতুক বলি। জাহান্নামে প্রত্যেক জাতির জন্য আলাদা আলাদা জায়গা বরাদ্ধ করা হয়েছে। প্রায় প্রতিটি জায়গাতেই উচু প্রাচীর দিযে ঘেরা এবং প্রহরী বসানো হয়েছে। যাতে জাহান্নামীরা পালিয়ে যেতে না পারে। কিন্তু যেই জায়গাটিতে বাঙালিরা ছিলো সেখানে কোন প্রহরী বসানো হয়নি। এই ব্যাপারটা ফেরেসতাদের কাছে খটকা লাগলো। তারা আল্লাহ তাআলার নিকট এই ব্যাপারটি জানতে চাইল। আল্লাহ তাআলা তাদের বললেন, আমি যা জানি তোমরা তা জানো না। যখনই কোন বাঙালা জাহান্নামী পলায়নের চেষ্ঠা করার জন্য প্রাচীর চেয়ে উঠতে চেষ্ঠা করে তখনই তাদের জাতিরা তাকে টেনে আবার নীচে নামিয়ে দেয়। তাদের এ নিবুর্দ্দিতার কারনে আমি সেখানে কোন প্রহরী নিযুক্ত করিনি। আসলে আমাদের স্বভাবটাই এমন। যখন দেখি কেউ উন্নতি করছে তখনই আমরা তার বিরুদ্ধে উঠে পড়ে লাগি। স্বভাবতই তার উন্নতি শিকেয় উঠে যায়। অন্যদিকে ঐ লোকটি যখন ধনি হওয়ার রাস্তা বের করল সে চেষ্ঠা করবে যাতে এই রহস্য আর কেউ না জানে। আর এ কারনেই বাঙালিদের এত অধপতন।
এবার আসি মূল কথায়। আমি এখন যে পদ্ধতিটির কথা বলব তা এর আগে ইংরেজিতে প্রকাশ করেছিলাম যা বিভিন্ন বিটুবি ফোরাম এবং ব্লগে প্রকাশিত হয়েছিল। যারা অনলাইনে এবং সোস্যাল নেটওয়ার্কিংয়ে অযথাই সময় নষ্ট করছেন তাদের জন্য আমার এ পদ্ধতি।
- ১। প্রথমেই আপনি www.linkedin.com এ রেজিষ্ট্রেশন করে নিন।
- ২। আপনার প্রোফাইলটি যথাসম্ভব রিচ করুন। আপনার ছবি আপলোড করুন।
- ৩। এবার কানেকশান খুজতে থাকুন। এমন লোক খুজবেন যারা বড় বড় ব্যবসায়ী বা বড় বড় কোম্পানীতে চাকুরী করে। সেক্ষেত্রে আপনি কোন বিষয়টিতে আগ্রহী সেটি বের করা জন্য www.StareonGroup.com এর export অংশে যান এবং সেখান থেকে ঠিক করে নিন আপনি কোন বিষয়টির উপর কাজ করবেন। সে বিষয়টি সম্পর্কে লিংকডইন এ বায়ার এবং সেলার খুজতে থাকুন।
- ৪। আপনি যে বিষয়টি বেছে নিয়েছেন সে সম্পর্কে গুগলিং করে তথ্য বের করুন এবং পড়াশুনা করুন। যখন সমস্ত বিষয়টি সম্পর্কে আপনার সাম্যক ধারনা জন্মাবে তখন আপনি লিংকডইন এ সে সকল বায়ারদের সাথে যোগাযোগ করুন। আপনি তাদের কি সার্ভিস দিতে পারবেন সেটা বলুন।
- ৫। গুগলিং করে আপনার বিষয় সম্পর্কিত বায়ারদের ইমেইল আইডি খুজুন। ইমেইল করুন। এভাবে একজন দুজন করে চালিয়ে যান। এদের মধ্যে কোন বায়ার আপনার সার্ভিসটির ব্যাপারে আগ্রহী প্রকাশ কররে আপনি সাথে সাথে কোন বায়িং হাউসের সাথে কথা বলুন। এক্ষেত্রে আপনি কাজ করবেন সম্পূর্ণ কমিশনের ভিত্তিতে। মূল লেনদেনের একটা নির্দিষ্ট অংশ আপনি কমিশন হিসেবে সেলার হতে পাবেন। এবং ভবিষ্যতেও তাদের সাথে ব্যবসা করার পথ সুগম হল। আপনি ইচ্ছে করলে আমার সাথেও যোগাযোগ করতে পারেন। কারন আমাদের একটা বায়িং হাউস আছে। আপনি আপনার সার্ভিস সম্পর্কিত একটি ব্লগ্ও খুলতে পারেন।
- ৬। কয়েকটি বিটুবি সাইটে রেজিষ্ট্রেশন করুন। সেখানে বায়ার পাওযা সহজ। রেসপন্সও খুব তারাতারি পাওয়া যায়। স্বনামধন্য দুটি বিটুবি সাইট হচ্ছে www.alibaba.com এবং www.ecplaza.net
- ৭। চালিয়ে যান, পড়াশোনা করুন, যত পারবেন জানবেন। একসময় দেখবেন অনলাইনে টাইম পাস করতে করতে আপনি একজন বড় ব্যবসায়ী হয়ে উঠেছেন। বলা যায় না আপনি নিজেও তখন দিয়ে দিতে পারবেন নিজস্ব বায়িং হাউস। ঠাট্টা নয়, এটাই বাস্তবতা। ভারত ও পাকিস্তানে এ রকম হাজারো উদাহরন রয়েছে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন